সাগরে ঘূর্নিঝড়ের আশঙ্কা । ২১-২৫ মে ২০২৪
২৩ এপ্রিল থেকেই আমরা ধারনা করে আসছিলাম যে মে মাসের তৃতীয় থেকে চতুর্থ সপ্তাহের মাঝে একটি সিস্টেম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে পারে। Inter Tropical Convergence Zone(ITCZ)তথা মৌসুমী বায়ু বিষুব রেখা অতিক্রম করে উত্তর ভারতীয় মহাসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করতে শুরু করেছে।
এর প্রভাবে দক্ষিণ ভারত,শ্রীলঙ্কা ও এর আশেপাশে সাগরে একটি ঘূর্ণিবাত্যা (ভর্টেক্স)গত বেশ কয়েকদিন ধরেই অবস্থান করছে যা ক্রমান্বয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ-মধ্য বঙ্গোপসাগরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি রসভি ওয়েভ, কেলভিন ওয়েভ ও এমজেও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে একটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হতে পারে ২২ তারিখ নাগাদ। এটি শুরুতে শক্তি বৃদ্ধি করে উত্তর পূর্বে সঞ্চালিত হলেও পরবর্তীতে উত্তর পশ্চিমমুখী হয়ে তার গতিপথ বজায় রাখতে পারে।
এই সময়কালে এটি ঘূর্ণিঝড় রেমালে পরিনত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের পূর্ব উপকূলের ওডিসা রাজ্য থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সুন্দরবন এরিয়ার মধ্যে যেকোন যায়গায় আঘাত করতে পারে, তবে মূল সম্ভাবনা থাকবে ওডিসা রাজ্যের আশেপাশেই। আমাদের ধারনামতে এটি ক্যাটাগরি-২ সাইক্লোনের উপরে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীন বরং এর গতি থাকতে পারে ঘন্টায় ৯৫ থেকে ১৪৫ km/h এর মধ্যেই। বিস্তারিত ছবি দেখে ধারণা নেয়া যেতে পারে
আগের আপডেট দেখুনঃ মে মাসে ঘূর্ণিঝড় হবেকি ? আমরা কিভাবে ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাপারে তথ্য দেই?
আমাদের সাগরে ঘূর্নিঝড়ের আশঙ্কা ও গতিপথের ধারনার পেছনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখাঃ
মূলত ওয়েস্ট্রার্ণ উইন্ড বার্স্ট এর অবস্থানজনিত প্রেসার ও উপরের স্তরে পূবালী বাতাস প্রবাহের জন্যে এটি প্রথমে উত্তর পুর্ব ও তারপর উত্তর পশ্চিমে মুভ করতে পারে। অপরদিকে আপার লেভেল জেটস্ট্রিম এই সময়ে উত্তরে থাকায় এর দ্বারা সিস্টেমকে পূর্বদিকে নিয়ে যাওয়াটা কম সম্ভবপর করে তুলতে পারে।
ঊর্ধ্বস্তরের পূবালী বাতাস প্রবাহের কারনে উলম্বীয় বায়ু শিয়ার বেড়ে যেতে পারে যার কারনে সিস্টেমের শক্তিমত্তা অনেক বেশী বৃদ্ধি পেতে পারবেনা। তাই অন্যান্য প্যারামিটারের যথেষ্ট উপস্থিতি বজায় থাকা স্বত্তেও এটি ক্যাটাগরি-১ এর শক্তিমত্তার মধ্যেই অবস্থান করতে পারে। অধিকিন্ত, পশ্চিমাঞ্চলীয় সাবট্রপিকাল রিজ এর কারনে এটি ল্যান্ডে ওঠার পড়ে সাধারণ সময়ের চেয়ে একটু বেশী সময় ধরেই ল্যান্ডে অবস্থান করতে পারে এবং ক্রমান্বয়ে শক্তিক্ষয় ঘটাতে পারে।
বাংলাদেশে সম্ভ্যাব্য ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব
সম্ভাবনা-১: যদি এটি বাংলাদেশের পশ্চিমে তথা সুন্দরবন উপকূলে আঘাত করে তবে সিস্টেমের ডান প্বার্শ তথা খুলনা ও বরিশাল এর উপকূলবর্তী নিচু এলাকা কয়েকফুট জ্বলোচ্ছাসে প্লাবিত হতে পারে। এবং প্রায় সারাদেশেই বেশ ভালো বৃষ্টিপাত সংগঠিত হতে পারে।
সম্ভাবনা-২: যদি এটি ওডিসার আশেপাশে ল্যান্ডফল করে তবে এর একটা আউটার কনভারজেন্স জোন চট্রগ্রাম ও বরিশালে ভালো বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে, অপরদিকে খুলনা অঞ্চলে সাইক্লোনের প্রভাব সরাসরি পড়তে পারে। আর দূরবর্তী প্রভাবের কারনে একটা দূর্বল কনভার্জেন্স অঞ্চল সারাদেশেই বিদ্যমান থাকতে পারে, যার ফলে বর্ষাকালের মত টিপ টিপ বৃষ্টি লক্ষ্য করা যেতে পারে প্রায় সারাদেশেই।
সিস্টেম যত বেশী শক্তিশালী হয় তত এটি কেন্দ্রের দিকে সংকুচিত হয়ে আশে যার ফলে মেঘ এর ব্যাসার্ধ কমে যায়। অপরদিকে যত কম শক্তিশালী হয় মেঘ তত দূরে ছড়ানো ছিটানো থাকে যা একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে। এই সব কারনে বাংলাদেশে বেশ ভালো বৃষ্টিপাত হবে বলেই ধারনা করা যাচ্ছে। বিডব্লিওটি তাই এসময়ে একটি সাইক্লোনিক বৃষ্টিবলয় ঘোষনা করবে যা সিস্টেম সুগঠিত হলে জানিয়ে দেয়া হবে, ইন শা আল্লাহ।
গরমঃ সিস্টেম সুগঠিত হয়ে গেলে ল্যান্ড-সী ব্রীজ বন্ধ হয়ে যাবে, তাই ২৩ মে এর পর থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত তীব্র ভ্যাপসা গরম অনূভূত হতে পারে।
জেলেদের জন্য সতর্কতা !!
২৪/২৫ তারিখ থেকেই উত্তর বঙ্গোপসাগর উত্তাল হওয়া শুরু করতে পারে, তাই এসময় এর পর থেকে সাগরে অবস্থান করা অনিরাপদ। তাই সমুদ্রগামী ট্রলার ও পর্যটকবাহী বোটগুলোকে বিএমডি ঘোষিত সতর্কতা সংকেত অনুসরণ করে নিরাপদ অবস্থান গ্রহণ করার জন্য আমরা শক্ত অনুরোধ করছি।
ধন্যবাদান্তে,
মোঃ খালিদ হোসাইন
প্রধান আবহাওয়া গবেষক
Bangladesh Weather Observation Team (BWOT)
বিঃ দ্রঃ
ছবিটি তৈরী করেছেনঃ মশিয়ার রহমান জনি, টিম ম্যানেজার, বিডব্লিউওটি
সার্বিক সহযোগিতায়ঃ রিসার্চ টিম, বিডব্লিউওটি
Advertisements