Advertisements


শীত ২০২৪-২৫ আবহাওয়ার পূর্বাভাস । নভেম্বর ২০২৪-  ফেব্রুয়ারি ২০২৫

শীত ২০২৪-২৫ স্পেশাল আবহাওয়ার পূর্বাভাস
3 Months temperature anomaly : CFS Model

শীত ২০২৪-২৫ স্পেশাল আবহাওয়ার পূর্বাভাস । নভেম্বর ২০২৪-  ফেব্রুয়ারি ২০২৫

শীত ২০২৪-২৫ স্পেশাল আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী কেমন থাকতে পারে এইবছর দেশের শীতকালের আবহাওয়ার পরিস্থিতি। কোন এলাকায় কেমন শীত পড়তে পারে একনজরে দেখে নেই।

নোট : এখানে শুধুমাত্র শীতকে প্রাধান্য দিয়ে পূর্বাভাসের বিস্তারিত বিবরণ লেখা হয়েছে । সেইসাথে খুঁটিনাটি কিছু আবহাওয়ার অন্যান্য বিষয়ও উল্লেখ করা হয়েছে। 

আসছে সামনে সল্পস্থায়ী শীতকাল, যেহেতু বাংলাদেশ একটি গরম প্রধান দেশ, তাই বছরের একটি বড় সময় ধরে এই দেশে গরম আবহাওয়া থাকে। শুধুমাত্র নভেম্বর হতে ফেব্রুয়ারি এই ৪ মাস কাগজে কলমে আমাদের দেশে শীতকাল ধরা হলেও শীতের ব্যপ্তি আরও কম সময় থাকে। মুলত তীব্র শীত থাকে ডিসেম্বর এর শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারী মাস পর্যন্ত, এর আগে ও পরে আরামদায়ক শীতের আবহাওয়া থাকে।

*// বলে রাখা ভালো যে প্রাকৃতিক কারনে চলতি শীত মৌসুমে দেশের অনেক এলাকায় স্বাভাবিক অপেক্ষা কিছুটা কম শীত থাকতে পারে ও তীব্র শৈত্য প্রবাহের স্থায়িত্বকাল এইবছর অনেক কম সময় ধরে থাকতে পারে //* 


তাহলে এবার ২০২৪-২৫ মৌসুমে শীত কেমন থাকতে পারে?

শীত ২০২৪-২৫ স্পেশাল আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী এই শীত মৌসূমে দীর্ঘস্থায়ী তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ( ৪ টু ৬ ° সেলসিয়াস) তাপমাত্রা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম, আর হলেও সর্বোচ্চ ১ সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে।  সেটাও রংপুর, রাজশাহী বিভাগের কিছু এলাকায়  ও খুলনা বিভাগের উত্তরে। তবে তীব্র শৈত্য প্রবাহ তেমন না হলেও কুয়াশা বেল্টের  আধিক্যের কারণে দিনের বেলা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমে শীতের অনুভূতি বাড়তে পারে কুয়াশা বেল্ট চলাকালীন সময়ে।

আসুন এক নজরে দেখে নেই কোন মাসে কেমন শীত পড়তে পারে।

নভেম্বর ২০২৪ মাসের আবহাওয়ার পূর্বাভাস

নভেম্বর ২০২৪ : এই মাসেও দেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা অনেক কম শীত থাকতে পারে দেশে। এই মাসের মাঝামাঝি হতে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে রাত্রিকালীন হালকা শীত থাকতে পারে ও দেশের বাকি এলাকায় প্রায় আরামদায়ক তাপমাত্রা থাকতে পারে। এই মাসে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা +14° সেলসিয়াস এর নিচে আসার সম্ভাবনা কম। মানে এই মাসে দেশে কোন শৈত্যপ্রবাহ আসছে না। 

তবে নভেম্বর মাসে দেশের অনেক এলাকায় রাতে ও ভোরে ঘন কুয়াশা এর আনাগোনা থাকতে পারে। নভেম্বর মাসে দেশে কোন কুয়াশাবেল্ট এর আশঙ্কা নেই। ও মেঘবিহীন দিন গুলোতে স্বাভাবিক রোদ পাওয়া যাবে ইনশা-আল্লাহ।

বৃষ্টি : নভেম্বর মাসের ৫/৬ তারিখ নাগাদ দেশে বিক্ষিপ্ত কিছু বজ্রবৃষ্টি হতে পারে, যা বৃষ্টি বলয় এর অন্তর্ভুক্ত নয়। এছাড়া  মাসের শেষ দিকে অর্থাৎ শেষ ১০ দিনে দেশে একটি বৃষ্টি বলয় প্রবেশ করতে পারে।

সিস্টেম : এ মাসের শেষ ১০ দিনে বঙ্গোপসাগর সিস্টেম তৈরির জন্য অনুকূল হয়ে উঠতে পারে। যে কারণে নভেম্বরের শেষ ১০ দিনে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় তৈরীর সম্ভাবনা রয়েছে।  

ডিসেম্বর ২০২৪ মাসের আবহাওয়ার পূর্বাভাস

ডিসেম্বর ২০২৪ : শীত ২০২৪-২৫ স্পেশাল আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী এই মাসেও দেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা কম শীত পড়তে পারে।  এই মাসের শেষ ১০ দিনে দেশের উপর একটি “মৃদু শৈত্যপ্রবাহ পরশ” আসতে পারে ( ৮ টু ১০° সেলসিয়াস) রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে ও যশোর, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, গোপালগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায়। তবে এর পূর্বে রাত্রিকালীন শীতের তীব্রতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে পারে। 

ডিসেম্বর এর প্রথম ২ সপ্তাহে দেশে তুলনামূলক কম শীত থাকতে পারে। এছাড়া এই সময় দেশের অনেক এলাকায় মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশা ও সারাদিন ধোঁয়াশাছন্ন থাকতে পারে। মানে রোদের আলো অনেক মলিন থাকতে পারে। এই মাসের শেষ সপ্তাহে রংপুর, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী বিভাগের বেশ কিছু এলাকা দুপুর পর্যন্ত কুয়াশাবেল্ট দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। 

বৃষ্টি : ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দেশের কিছু এলাকায় কিছুটা বৃষ্টি হলেও হতে পারে। তবে মাসের বাকি সময়ে বৃষ্টির সম্ভাবনা কম। তবে কোন কারণে পশ্চিমা লঘুচাপ আসলে হালকা বা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে মাসের যে কোন অংশে।

সিস্টেম : এই মাসের প্রথম সপ্তাহে সাগরে একটি সিস্টেম(লঘুচাপ/ নিম্নচাপ) তৈরি হতে পারে। সিজনাল প্যাটার্ন অনুযায়ী যা দক্ষিণ ভারত বা শ্রীলঙ্কায় প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনা থাকতে পারে।

জানুয়ারি ২০২৫ মাসের আবহাওয়ার পূর্বাভাস

জানুয়ারি ২০২৫ : জানুয়ারী মাসে আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি শীত পড়ে থাকে। তবে এই বছর জানুয়ারী তে দেশে স্বাভাবিক শীত পড়তে পারে উত্তর অঞ্চলে। কিন্তু দক্ষিণ ও মধ্য অঞ্চলে স্বাভাবিক অপেক্ষা কম শীত পড়তে পারে।

জানুয়ারি মাসে প্রায় ৩ টি শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে।  যার ১ টি মৃদু ( ৮ টু ১০°) , ১ টি মাঝারি ( ৬ টু ৮ °) ও একটি আংশিক তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ( ৪ টু ৬ ° সেলসিয়াস) হতে পারে।  এই শৈত্য প্রবাহ গুলো সারা মাসব্যাপী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধাপে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রভাব বিস্তার করতে পারে।

আংশিক তীব্র শৈত্য প্রবাহটি জানুয়ারির মাঝামাঝি আসার সম্ভাবনাই বেশি। তবে  তীব্র শৈত্য প্রবাহ আসলেও তা দেশের কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় যেমন চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, শ্রীমঙ্গল, নাটোর, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, মেহেরপুর ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় আসতে পারে। এবং ওই সময় দেশের বাকী এলাকায় মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্য প্রবাহ চলতে পার। উল্লেখ্য, ঢাকা শহর এই তীব্র ও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ থেকে মুক্ত থাকতে পারে।

এ মাসে প্রায়শই মধ্যরাত হতে সকাল পর্যন্ত, কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত বা সারাদিন দেশের উত্তর অঞ্চল হতে মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত কুয়াশাবেল্ট দ্বারা আকাশ ঢাকা থাকতে পারে। অর্থাৎ কোথাও কোথাও  দুপুর পর্যন্ত ও কিছু এলাকায় মাঝে মাঝে সারাদিনও রোদের দেখা পাওয়া যাবেনা ইনশাআল্লাহ।

বৃষ্টি : এই মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ মাসের কিছু অংশ বিশেষে পশ্চিমা লঘুচাপের কারণে ও অন্যান্য আবহাওয়া জনিত গোলযোগের কারণে সামান্য কিছু বৃষ্টিপাত হলেও হতে পারে।

সিস্টেম : এই মাসে সাগরে উল্লেখযোগ্য বড় কোন সিস্টেমের সম্ভাবনা নেই।  তবে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। সিজনাল প্যাটার্ন অনুযায়ী যা দক্ষিণ ভারত বা শ্রীলংকায় প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনা রয়েছে।

ফেব্রুয়ারি ২০২৫ মাসের আবহাওয়ার পূর্বাভাস 

ফেব্রুয়ারী ২০২৫ :  এই মাসে দেশে প্রায় স্বাভাবিক শীত পড়তে পারে। এই মাসে দেশের উপর তীব্র শৈত্য প্রবাহের সম্ভাবনা কম। এই মাসে প্রায় ২/৩ টি শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে।  যার ১/২ টি মৃদু ( ৮ টু ১০°) , ১ টি মাঝারি ( ৬ টু ৮ °) হতে পারে।  মাঝারি শৈত্যপ্রবাহটি আসতে পারে  প্রথম/দ্বিতীয় সপ্তাহে, সেটাও খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও রংপুর বিভাগে ও শ্রীমঙ্গল সহ ঢাকা বিভাগের কিছু এলাকায়।

ফেব্রুয়ারী মাসের তৃতীয় সপ্তাহে দেশের উপর একটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে, সেটাও খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও রংপুর বিভাগে ও দেশের কিছু এলাকায়।  এইসময় দেশের ৫০ শতাংশ এলাকায় গভীর কুয়াশাবেল্ট দ্বারা আক্রান্ত থাকতে পারে।


ফেব্রুয়ারী মাসে দেশের অনেক এলাকায় ঘন কুয়াশার আধিপত্য বেশি থাকতে পারে। সেইসাথে দেশের উত্তর ও মধ্য অঞ্চলের অনেক এলাকা গভীর কুয়াশাবেল্ট দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে প্রায়শই। 

বৃষ্টি : মূলত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে দেশে একটি বৃষ্টিবলয় আসতে পারে। তার আগে তেমন কোন বৃষ্টির সম্ভাবনা পাওয়া যায়নি এই মাসে। তথাপি পশ্চিমা লঘুচাপের হুটহাট করে চলে আসাতে নতুন নতুন সময়ে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা তৈরি হওয়া অসম্ভব নয়। 

সিস্টেম : এ মাসে সাগরের সিস্টেম অর্থাৎ লঘুচাপ, নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা পাওয়া যায়নি।

যাহোক, বরাবরের মতো দেশের উপকূলীয় জেলা গুলো শৈত্যপ্রবাহ থেকে মুক্ত থাকতে পারে। ও শহর হিসেবে ঢাকা জেলা সদরেও কোন মাঝারি বা তীব্র শৈত্যপ্রবাহ আসছে না এ বছর। অর্থাৎ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা +৮° সেলসিয়াস এর নিচে নামার সম্ভাবনা কম রাজধানীতে।

ঢাকা শহরে আসলে অতিরিক্ত দালান, কলকারখানা, বাতাসে দূষণ এর কারনে গ্রীন হাউস ইফেক্ট এর জন্য  সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেমন নামতে পারেনা, তাই সবসময় শীত কম পড়ে। ও চট্টগ্রাম শহরেও অনেক কম শীত পড়তে পারে।

শৈত্য প্রবাহের ক্যাটাগরি সমূহ নিম্নরূপ (সেলসিয়াস অনুযায়ী): 

তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ( ৪ টু ৬ °) ( ৪ টু ৫.৯৯ °)

মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ : ৬ টু ৮ °) ( ৬ টু ৭.৯৯°) 


মৃদু শৈত্যপ্রবাহ : ( ৮ টু ১০ °) ( ৮ টু ৯.৯৯°) 

*আমাদের দেশে কিছু এলাকা আছে যেখানে শীতকালে বেশ শীত পড়ে ও কম তাপমাত্রা রেকর্ড হয় যেমন, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, শ্রীমঙ্গল, তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড়, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, নাটোর, কুষ্টিয়া, গোপালগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাগুরা, সাতক্ষীরা, আবার দেখা যায় গরম কালেও এইসকল এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়।

কুয়াশাবেল্ট কি? আমাদের ফেইসবুক পেজে সার্চ করুন পেয়ে যাবেন।

ধোঁয়াশা কি? আমাদের ফেইসবুকভ পেজে সার্চ করুন পেয়ে যাবেন।

আরো জানুনঃ 

আরো জানুনঃ
বৃষ্টি বলয় কি? এর ধরন কি কি?
শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড়ের সময় করণীয় কি?
ঘূর্ণিঝড় কিভাবে সৃষ্টি হয়?
ঘূর্ণিঝড় এর ক্যাটাগরি সমুহ
ঘূর্ণিঝড়ের সতর্ক সংকেতের অর্থ কি?


এখানে পূর্বাভাস যেনো জটিল না হয় ও পূর্বাভাস যেনো সকলে বুঝতে পারে সেজন্য আবহাওয়ার জটিল প্যারামিটার ও ভাষা ব্যবহার করা হয়নি। সাধারণ ভাষায় পূর্বাভাসটি বর্ণনা করা হয়েছে। 

*বিশেষ নোটঃ প্রাকৃতিক কারনে এই আপডেট কিছুটা পরিবর্তন হওয়া স্বাভাবিক। এটা শুধুমাত্র আমাদের গবেষণায় পাওয়া তথ্য, কোনো সরকারি পূর্বাভাস বা অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তি না এবং আবহাওয়া সংক্রান্ত অফিসিয়াল পূর্বাভাসের জন্য সবাই বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তি অনুসরণ করুন। এবং এই পূর্বাভাসের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করুন, অথবা তাদের পূর্বাভাস অনুসরণ করুন।

ধন্যবাদ : পারভেজ আহমেদ পলাশ, চেয়ারম্যান (BWOT)
সার্বিক সহযোগিতায়, আমাদের সকল আবহাওয়া গবেষক। 
পোস্ট আপডেট : ৩১ শে অক্টোবর রাত ৮ টা।

Advertisements


Advertisements