
কেন বৃষ্টিকে বৃষ্টিবলয় হিসেবে পূর্বাভাস করা জরুরী?
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আবহাওয়া বিজ্ঞানে বৃষ্টিবলয় শব্দের প্রচলন নেই বলে অনেকেই মনে করে বৃষ্টি বলয় বলতে কিছু নেই। অভিযোগ আসে যে, আমাদের বৃষ্টি বলয় শব্দ প্রয়োগ বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে, উল্লেখ করেন। কেন বৃষ্টিকে বৃষ্টি বলয় হিসেবে পূর্বাভাস করা জরুরী তা জানার আগে কিছু প্রশ্ন করি!!
আচ্ছা গরম তো গরমই, তাহলে তাপপ্রবাহ আবার কি? শীত তো শীতই, তাহলে শৈত্যপ্রবাহ আবার কি? বাতাস তো বাতাসই, তাহলে লঘুচাপ বা সুপার সাইক্লোন আবার কি?
এখন এগুলোর উত্তর আপনারা এভাবে দিবেন যে, কোনো স্থানে নির্দিষ্ট কিছুদিনের জন্য যদি গরম তার স্বাভাবিক মাত্রা অতিক্রম করে তখন তাকে তাপপ্রবাহ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তারপরে সেই তীব্রতার মাত্রা ভাগ করে তাপপ্রবাহকে ৪ টা ভাগে ভাগ করা হয়েছে।যেমন মৃদু, মাঝারি, তীব্র এবং অতি তীব্র এভাবে। যখন যেমন তীব্রতা থাকে তখন সেই মানে বিবেচনা করা হয়। শৈত্য প্রবাহের বেলাতেও একই রকম হিসাব করা হয়।
ঘূর্ণিঝড় এর ক্ষেত্রে বাতাসের তীব্রতার উপরে নির্ভর করে সাধারণ ঘূর্ণিঝড় থেকে শুরু করে ক্যাটাগরি ১ থেকে ক্যাটাগরি ৫ পর্যন্ত হিসাব করা হয় তীব্রতার ভিত্তিতে। আবার কোন কোন সংস্থা তীব্র,অতিতীব্র, প্রবল, অতি প্রবল ইত্যাদি ক্যাটাগরি দিয়ে থাকেন।
এগুলো সবই করা হয় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের জন্য। এবং মানুষ যাতে সহজে বুঝতে পারে তাই পূর্বাভাসের সুবিধার্থে ঘূর্ণিঝড় এর নামকরণও করা হয়।
তাহলে বৃষ্টির ক্ষেত্রে সমস্যা কোথায়? বৃষ্টি কেন বলয়ের আওতায় আসবেনা?
গুরুত্ব সাপেক্ষে বৃষ্টিকে বৃষ্টিবলয় হিসেবে পূর্বাভাস এবং নামকরণ করার উদ্যোগ আরো আগে থেকেই গ্রহণ করা উচিত ছিলো। কিন্তু বাংলাদেশে একমাত্র আমরাই এই বৃষ্টিবলয় হিসাবে বৃষ্টির আপডেট দেই যাতে মানুষের বুঝতে সুবিধা হয়। একটা ধারনা পায় যে এই সময়ে তার এলাকায় কতটুকু বৃষ্টি হতেপারে।
বৃষ্টি বলয়েরও মান আছে দূর্বল, মাঝারি, ভারী, অতিভারী, প্রবল ইত্যাদি বৃষ্টি বলয়।
বৃষ্টির পরিমাণ এর উপর নির্ভর করে ক্যাটাগরি নির্ধারিত হয়, এবং মানুষের মনে রাখা বা সহজে বুঝার জন্য নাম করন করা হয়।
বৃষ্টিকে বৃষ্টি বলয় হিসাবে উল্লেখ করা কেন জরুরি??
কারন আপনি যদি আপডেট দেন আগামী ৭ দিন বরিশালে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতেপারে। আর ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি বলতে ৮৯+ মিমি বুঝান। তাহলে সবাই কি বুঝবে?
সাত দিনের প্রতিদিন ৮৯+মিমি? নাকি যেকোনো একদিন ৮৯+মিমি?
৮৯মিমি + বলতে অনেকেই বুঝবে যেকোনো দিন বেশি হলে হয়ত ১০০+মিমি হতেপারে বা বড়জোর ১৫০ মিমি হতেপারে। আবার কেউ কেউ বুঝবে ৭ দিনে প্রতিদিন ৮৯+ মিলিমিটার বৃষ্টি।
সেই হিসাবে কেউ কেউ ৭ দিনে মোটে ১৫০ মিমি বৃষ্টি মোকাবিলার একটা প্রস্তুতি গ্রহণ করলো। আবার কেউ কেউ ৭ দিনে ৬২০+মিমি বৃষ্টির প্রস্তুতি গ্রহণ করল। বিভ্রান্তি তৈরি হল কিনা?
এরপর ধরুন ৭ দিনে বরিশালে যেকোনো একটি বৃষ্টি হলো, মানে হয় ১০০-১৫০ মিমি অথবা ৬০০-৭০০মিমি। এখন ১৫০ মিমির প্রস্তুতি দিয়ে কি ৬২০+ মিমি মোকাবিলা করা সম্ভব? অথবা ৬২০+মিমির প্রস্তুতির জায়গায় ১৫০মিমি হলে কি প্রস্তুতি বৃথা যাবেনা?
কিন্তু যদি বলা হয় ৭ দিন বরিশালে একটা বৃষ্টি বলয় চালু থাকতে পারে। এবং এতে তখন ক্যাটাগরি বিবেচনায় মোট ৫০০-৬০০ মিমি বৃষ্টি হতে পারে উল্লেখ করা হয়। তাহলে এটা মানুষের বুঝতে অনেক সুবিধা হবে। যেমনটা তাপপ্রবাহ আর শৈত্য প্রবাহের বেলাতে করা হয়।
এখন যদি বলেন বৃষ্টি বলয় বলতে কিছু নেই। তাহলে আমরা বলবো, আগে মানুষ মনে করতো হ্যারিকেন মানে সাগর থেকে আসলেই হ্যারিকেন(বাতি) উঠত বা দৈত্যের মতো কিছু একটা উঠে সব ভেঙে ফেলতো।
কিন্তু এমন কিছু বোঝাতে ঝড়কে হারিকেন বলে সম্বোধন করা হয় না। এবং এর নামকরণের সাথেও ঘূর্ণিঝড়ের বৈজ্ঞানিক কোনো সম্পর্ক নেই। বরং পূর্বাভাস প্রদানের সুবিধা এবং সকল কমিউনিটির বোঝার সুবিধার্থে রেকর্ড কিপিং করার সুবিধার্থে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়ে থাকে।
ঠিক তেমনি বৃষ্টিরপাতের পূর্বাভাস ইভেন্ট বেইসড ইফেক্টিভ ভাবে জনসাধারণের বোধগম্য করে তুলতে এবং পূর্বাভাস মনে রাখার জন্য আমরা বৃষ্টিবলয় নামকরণ করে থাকি। যা ট্র্যাডিশনাল আবহাওয়া পূর্বভাস সিস্টেম থেকে অনেক ইফেক্টিভ। এবং আমরা এর অনেক পজিটিভ ফলাফল পেয়েছি।
সুতরাং বলা চলে শুধু তাপ প্রবাহ, সত্য প্রবাহ বা ঘূর্ণিঝড়/হারিকেন সম্বোধন করে তাপমাত্রা ও বাতাসের পূর্বাভাস করার পাশাপাশি বৃষ্টির পূর্বাভাস ইভেন্ট বেইসড বৃষ্টি বলয় হিসেবে পূর্বাভাস করাটা অত্যন্ত জরুরী। এবং ঘূর্ণিঝড়ের পাশাপাশি মেজর তা প্রবাহ, শৈত্যপ্রবাহ , ও বৃষ্টি বলয়কে নামকরণ করে পূর্বাভাস করলে আবহাওয়া পূর্বাভাস সিস্টেমে অকল্পনীয় কার্যকরী ফলাফল আসবে।
আরো পড়ুনঃ বৃষ্টি বলয় কি? এর ধরন কি কি?
Advertisements